চাঁদাবাজিসহ অনিয়ম বন্ধে আমরা আগে থেকেই কাজ করছি। এ ধারাবাহিকতা চলমান থাকবে। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে
জবি থেকে আইনুল ইসলাম
দেশের অন্যতম বৃহৎ নদীবন্দর সদরঘাট। এ ঘাটকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি, মাদকের কারবার, জুয়া খেলা, কুলিদের বেপরোয়া কার্যক্রমসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। তবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর পাল্টে গেছে সদরঘাটের চিত্র। এখন অনেকটা স্বস্তিতেই রয়েছে যাত্রীসহ আশপাশের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে সদরঘাট ও এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আশেপাশের দোকানগুলোতে কিছুকিছু জিনিসপত্রের দাম কমেছে। খাবারের পরিমাণেও পরিবর্তন এসেছে। আগে নৌকা ঘাটে চাঁদা তুলতো কিন্তু এখন চাঁদা তোলা বন্ধ হয়েছে। একসময় কুলিদের লাল নীল হলুদ বাহিনী অভিনয় কৌশলে যাত্রীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করত। কিন্তু সেই নানা রঙ্গের বাহিনীকে সদরঘাটে দেখা যায়নি। সদরঘাটের আশেপাশে প্রকাশে অনেকে মাদকদ্রব্য কারবারি চলত কিন্তু বর্তমানে বন্ধ আছে। অনেকে জানান তারা গোপনে তাদের কারবারি চালাচ্ছে।
এবিষয়ে এমভি সাত্তার খান-১ এর কেরানী খোকন বলেন, ক্ষমতার রদবদলের পর লঞ্চে কেউ চাঁদা তুলতে আসেনি। আশেপাশের টোকাই ছেলেরা মাদকদ্রব্য বিক্রি করতো ও সেবন করতো। তাদের এখন দেখা যায় না। বলা চলে সকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। লঞ্চের ভাড়া সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কেউ বেশি নিচ্ছে না। প্রয়োজনে কিছু কম রাখা হচ্ছে।
এবিষয়ে ঝালমুড়ি বিক্রেতা হাশিম হোসেন বলেন, আমি বহুদিন ধরেই সদরঘাটে ঝালমুড়ি বিক্রি করছি। কিছুদিন পান বিক্রির কাজও করেছি। আমাকে এখানে ব্যবসা করতে গিয়ে চাঁদা দিতে হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই চাঁদা নিত। ১০০ টাকা করে চাঁদা দিতাম। নিজে পরিশ্রম করে টাকা আয় করে অকারণে অন্যকে ভাগ দেয়াটা খুব কষ্টের। ক্ষমতার রদবদলের পর এ চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে। আপাতত এখন আর কেউ চাঁদা তুলতে আসে না। চাঁদা ছাড়া যদি ব্যবসা করতে পারি তাহলে অন্তত ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবো।
সদরঘাট থেকে একটি খাবারের দোকান থেকে জারিফ হাসান নামে এক হোটেল বয় বলে, জিনিসপত্রের অতিরিক্ত দাম, চাঁদাবাজিসহ ইত্যাদি কারণে আমাদের খাবারের দাম বেশি রাখতে হয়েছে। এখনো দেশে জিনিসপত্রের দাম তেমনভাবে কমেনি। কিন্তু চাঁদাবাজিটা কমেছে। চাঁদাবাজির কারণে লাভের একটা বড় অংশ চলে যেত। এখন চাঁদাবাজি নেই তাই প্রতি প্লেটে খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছি। জিনিসপত্রের দাম কমলে খাবারের দামও কমবে।
কাপড় ব্যবসায়ী রবিন ইসলাম বলেন, আমার কাছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুলের ছেলেরা এসে জোর করে চাঁদা তুলছিল। না দিলে ভয়ভীতি দেখাতো। কিন্তু বর্তমানে কেউ চাঁদা তুলতে আসে না। আমরা এখন খুব স্বস্তিতে আছি।
এবিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সলেমান বলেন, সদরঘাটের চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অনিয়ম বন্ধের জন্য আমরা আগে থেকেই কাজ করছি। এ ধারাবাহিকতা আমাদের চলমান থাকবে। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য পরবর্তীতে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় করবো।
এবিষয়ে সদরঘাট নৌ থানার সাব ইন্সপেক্টর আল আমিন বলেন, সদরঘাটে এখন চাঁদাবাজি নেই। মাদক কারবারের বিষয়টি আগেও ছিলনা এখনও নেই।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
